আমি একজন বার্মিজ বুদ্ধিস্ট বলছি, রাখাইনে শুধু এথনিক ক্লিনজিং নয় পূর্ণ গণহত্যা চলছে: অধ্যাপক মং জানি, ভিডিও সহ

নিউজ অর্গান টোয়েন্টিফোর.কম: 

ණ☛ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে এক প্রতিবাদ চলাকালে গত ৯ই সেপ্টেম্বর এক সাক্ষাৎকার দেন অধ্যাপক মং জানি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইস্কনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যাবিষয়ক গবেষক এবং মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী। তিনি একজন বার্মিজ পরিবারের সন্তান এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ছিলেন অং সাং সূচিরও কাছাকাছি।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তার সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশের অনুবাদ আমাদের নিউজ অর্গান টোয়েন্টিফোর.কম পাঠকদের জন্য তুলে করা হলো-

প্রশ্ন: মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের চলমান পরিস্থিতি কী? সেখানকার পরিস্থিতি মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় কিভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে? 

অধ্যাপক মং জানি: এখন রাখাইন স্টেটে যা ঘটছে তা পুরোপুরি গণহত্যা, পূর্ণমাত্রায় গণহত্যা। এটা শুধু ‘জাতিগত নির্মূল ’ নয়। মানুষজনকে সেখান থেকে শুধু উচ্ছেদই করা হচ্ছে না, গণহত্যাও চলছে। প্রচুর মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।
আমি বার্মা থেকে এসেছি। আমি বুদ্ধিস্ট, আমি বার্মিজ, এসেছি যৌথ পরিবার থেকে। আমার গ্রেট আঙ্কেল যিনি গত বছর মারা গিয়েছেন, তিনি রোহিঙ্গা ডিস্ট্রিক্টসহ আরো কয়েকটা অঞ্চলের মিলিটারি-কমান্ডার-ইনচার্জ ছিলেন। রোহিঙ্গা আমাদের নিজেদের জনগোষ্ঠী। তারা শান্তিপূর্ণ হিসেবে সেখানে পরিচিত। কমিউনিস্টসহ বার্মার অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মতোই তাদের মধ্যেও বিদ্রোহী আছে। তারা র্বামার কেন্দ্রীয় রাষ্ট্ররে বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আত্মসমর্পনের পর তারা শান্তিচুক্তির ব্যাপারে একমত হয়।

 সেখানকার বিভাজনের ধারণা দিন আমাদের...

অধ্যাপক মং জানি: পশ্চিম বার্মায় আমাদের কয়েকটি জনগোষ্ঠী আছে যারা তাদের জন্মভূমির স্বাধীনতা দাবি করে আসছে। কেন্দ্রীয় বার্মা থেকে তাদের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস আছে। আছে ভাষাগত ভিন্নতা। বার্মা খানিকটা বৃটেনের মতোই, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের আলাদা ইতিহাস-সংস্কৃতি ও ভাষাগত বৈচিত্র আছে।
পশ্চিম বার্মায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, আপনি ত্রিমুখী রাজনীতি দেখতে পাবেন। ওই অঞ্চলে বুদ্ধিস্ট রাখাইন জনসংখ্যার তুলনায় রোহিঙ্গা জনসংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগ। সংখ্যায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সেখানে ক্ষুদ্র। অন্যভাবে বলতে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী স্থানীয় কি জাতীয় কোনো বুদ্ধিধস্টদের জন্য হুমকি নয়। সুতরাং আমরা বুদ্ধিস্টরা বার্মায় একটা প্রভাবশালী অংশ যারা বার্মার পশ্চিমাঞ্চলকে নিজেদের কলোনী বানায় ১৭৮৫ সালে। ফলে বুদ্ধিস্ট রাখাইন, রোহিঙ্গা মুসলিম, অন্যান্য মুসলিম, ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর লোকজন একই রাজ্যের আওতায় চলে আসে।
অনেক মুসলিম বাংলাদেশে তথা তৎকালীন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যায়। এর ২০ বছর পরে ব্রিটিশরা এই নতুন কলোনিকে যুক্ত করে। ১৯৪০ সালে বার্মা ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। এরপরে বুদ্ধিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজরা ব্রিটিশদের মতো আচরণ শুরু করে। বিষয়টা এমন যে তারা নতুন ব্রিটিশ। আমরা দেখলাম যে, সেনা-নিয়ন্ত্রিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজরা ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি অনুসরণ করতে লাগল। 

 তাহলে সেখানে তিনটা গ্রুপ। আক্রান্ত রোহিঙ্গা, বুদ্ধিস্ট...

অধ্যাপক মং জানি: রাখাইন বুদ্ধিস্টরাও সেখানে এই কলোনীকরণের শিকার। সেনা-নিয়ন্ত্রিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজ বুদ্ধিস্টরা রাখাইন বুদ্ধিস্ট এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। 

প্রশ্ন: রাখাইন বুদ্ধিস্ট এবং সেনা-নিয়ন্ত্রিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজ বুদ্ধিস্টদের মধ্যে মৈত্রী... 

অধ্যাপক মং জানি: একদম ঠিক। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পরে এবং এই মৈত্রীর আগে, রাখাইনরা বার্মা থেকে নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করেছিল। এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের একটা ছোট্ট গ্রুপও স্বাধানতা দাবি করেছিল। কিন্তু মুজাহিদিন নামের ছোট্ট এই রোহিঙ্গা গ্রুপ আত্মসমর্পন করে এবং বার্মিজ মিলিটারিরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করে যাতে তাদেরকে রাখাইন এবং রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে দ্বিমুখী যুদ্ধ করতে না হয়।
ষাটের দশক থেকে বার্মিজ মিলিটারি মুসলিম বিরোধী র‌্যাডিক্যাল টার্ন নিয়েছে। এই র‌্যাডিক্যাল টার্ন কেন্দ্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যাযজ্ঞে পরিণত করেছে। মিলিটারিরা সিদ্ধান্ত নিলো যে রোহিঙ্গারা বার্মার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকিস্বরুপ। একমাত্র কারণ, তারা মুসলিম। 

প্রশ্ন: তাইলে পরিকল্পনা অন্য সবাইকে সমূলে উচ্ছেদ... 

অধ্যাপক মং জানি: একদম ঠিক। ৩৯ বছরে ইত্যেমধ্যে ১০ লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ‘এথনিক ক্লিনজিং’ হলো শুধু একটা বিশেষ জায়গা থেকে মানুষজনকে উচ্ছেদ করে দেয়া। কিন্তু এটা তারচেয়ে ভয়াবহ- সিনিস্টার এবং ইভিল। কারণ সেখানে একটা পলিসি আছে যে রোহিঙ্গা মানুষদের জন্য এমন একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যাতে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় এবং গোষ্ঠীগতভাবে সমূলে উৎপাটিত হয়। তারা যাতে পুষ্টি না পায় সেজন্য তাদের বাইরের চলাচল সংকুচিত এবং নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়, চাষবাস ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
আরাকান পরিস্থিতিতে আপনি দেখবেন যে গাজা (ফিলিস্তিন) এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) একটা সম্মিলন। আপনি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বুঝতে পারবেন না যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটা বিশাল কারাগারের মধ্যে বন্দী। রোহিঙ্গা যুবকদের দেখুন তাদের কোনো ভবিষ্যত নেই, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, তখন তো তারা হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়।
এটা অনেকটা অসউইজের (পোলান্ড) একটা ঘটনার মতো। ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে পোলিশ সমাজকর্মীর সহায়তায় চার-পাঁচজনের একদল ইহুদি যুবক হিটলারের সেই কনসেনট্রশন ক্যাম্পে থাকাকালীন টিফিন ক্যারিয়ারে করে বোমা বহন করে এসএস বাহিনীর চারজন সদস্যকে উড়িয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় হিটলারের বাহিনী পাঁচশ যুবককে নির্মমভাবে মেরে ফেলে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি হিটলারের এই বিশেষ ভয়াবহ ঘটনার থেকেও আরো নির্মম।
রোহিঙ্গা জঙ্গি ১২ পুলিশ সদস্যকে মেরে ফেলেছে। আর আমরা ৩ লক্ষ মানুষকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আগুন দিয়ে ধ্বংস করেছি সবকিছু। টানা একশ কিলোমিটারের মতো জায়গা পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছি। শিশু-বৃদ্ধকে যারা হাঁটতে পারে না তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, মানুষ যখন পালিয়ে যাচ্ছে তখনও মিলিটারি গুলি করছে। পেছন থেকে, স্পিডবোট থেকে, হেলিকপ্টার থেকে। এবং লম্বাপথে যেদিক দিয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছে সেখানে ল্যান্ডমাইন পুঁতে পুঁতে রেখে দেয়া হয়েছে। এটা সেই বার্মিজ মিলিটারি যারা রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে এবং একই সঙ্গে চাচ্ছে যতবেশি হত্যাযজ্ঞ চালানো যায়। সুতরাং এটা একইসঙ্গে গণহত্যা এবং এথনিক ক্লিনজিং। কিন্তু বিপদজ্জনকভাবে এটা একটা চাপিয়ে দেয়া গণহত্যা।

 সুচির নির্বাচনের সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সব পশ্চিমা গণমাধ্যম বিষয়টি এড়িয়ে গেছে...

অধ্যাপক মং জানি: তারা সুচির সঙ্গে যায়। দুই বছর আগে যখন সুচিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রোহিঙ্গা বিষয়ে, তিনি বলেছেন এটা আমাদের অগ্রাধিকার বিষয় নয় কারণ বার্মায় অনেক বড় বড় ইস্যু আছে। এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম এখনো সুচির সঙ্গেই হেলে-দুলে হাসছে। 

প্রশ্ন: সবার মনোযোগ কি অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকেই? 

অধ্যাপক মং জানি: না, না। এ রকম না। কিন্তু ‘মুসলিম’দের হত্যা করা হলে কার কী আসে যায়! আপনি কি ভাবেন যে ইতালিতে ক্যাথলিকরা যদি একইভাবে মরতো পশ্চিমা গণমাধ্যম এটা কাভার করতো না? অবশ্যই করত। 
পশ্চিমা গণমাধ্যম অ্যান্টি-মুসলিম-রেসিস্ট। এই কারণেই আপনি দেখবেন যে, প্যারিস বার্সেলোনার ঘটনা এত গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হলেও সিরিয়া বা দামেস্কে হাজার হাজার শিশুকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোতে তাদের টু শব্দ পাওয়া যায় না।

 

May 18, 2021 | Blog
Published by NOW.WORLD on May 11, 2021 Dear G7 Leaders, We, pro-...
Sep 12, 2019 | Blog
"Rohingya Ethnic Nationality" A historic letter by my late great-...
Sep 20, 2018 | Op-Eds, | Blog
Humanitarian Colonialisms in the Rohingya Genocide NGOs destroy civil...
Aug 28, 2018 | Blog
Buddhist Nationalism in Burma Institutionalized racism against the...
Apr 27, 2018 | Blog
Un-official translation of the official Burmese transcript of the...